শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৭

স্টেরয়েড ঔষধ খেয়ে মোটা হওয়া ভালো ?? না খারাপ ??


                        অনেকদিন ধরেই ভাবছি যে বিষয়টা,তা হল_যারা একেবারেই হাড্ডিসার,তারা অনেকের কুমন্ত্রনায় পড়ে,নিজের শরীর মোটা করার জন্য নানা রকম স্টেরয়েড ঔষধ সেবন করে থাকেন।যা যমদূত কে আগাম কাছে টানার শামিল।
কেন বলছি ??

             (আগেই বলি,বুঝানোর সুবিধার্থে আমার জীবনের এক দুঃখ জনক ঘটনার বর্ণনা করছি)

শুনুন তাহলে..................

                                       আজ থেকে প্রায় ১০বছর আগের কথা বলছি।আমার বয়স ১৮ বছর এর কাছাকাছি। আমি তখন চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ লাইন এলাকায় থাকি,আমার বাবা মা এবং ছোট বোনকে নিয়ে।কেননা আমার বাবা তখন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন।
এবার আসল কথায় আসি।
আমার এক হাড্ডিসার পাতলা চিকন বন্ধু রাসেল (ফেক নাম) হটাত করেই,মানে বলতে পারেন অনেকটা রাতারাতি,
মাত্র ৭/১০ দিনের মাথায় নিজের ওজন ৫/৬ কেজি বারিয়ে ফেলে।দেখতেও অনেকটা গোলগাল লাগছিল।মুখটা ছিলো মাংসে পরিপূর্ণ।মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানেই কেমন আমূল পরিবর্তন,ওর শারীরিক গড়নে।
আমরাতো সব বন্ধু মিলে খুবই অবাক।তারপরও ওর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অনেক বাহবা দিলাম।
তারপর,যথারীতি মাত্র ১/২ মাসের মধ্যেই নাদুসনুদুস হয়ে উঠলো রাসেল।
১/২ মাস অগেও যে ছিলো মাত্র ৫০ কেজি, সে এখন হয়ে গেলো ৭৫ কেজি।
অনেকটা আশ্চর্যের ব্যাপর।এত জলদি একটা মানুষ কি ভাবে এত ওজন বাড়াতে পারে।
যাইহোক,আমরা সকল বন্ধুরা মিলে এই সুস্বাস্থ্যের চেরাগের খবর জানতে চাইলাম।
বন্ধুতো বলে না।শুধু একই উত্তর,খাওয়া বাড়িয়ে।আমাদেরও তখন জানা হল না।

                                     এখন একটু চুপ থাকি।মাঝের কথা ছেড়ে শেষের দিকে অসি।
যেখানে শুরু করেছিলাম সেখান থেকে ৪/৫ বছর পর.................................

                                        আমি তখন ফরিদপুর।আমার পড়াশুনা নিয়ে আছি।আমার স্টাডি ছিলো ফার্মেসী ডিপার্টমেন্ট এ। এর পাশাপাশি প্যারামেডিকেল ও শেষ করেছি।
 একদিন রাতে আমার এক বন্ধু আমায় মোবাইল কল করে বলে রাসেল খুবই অসুস্থ্য। হাসপাতালে ভর্তি আছে।
জানতে চাইলাম কি সমস্যা।
বলল,অ সঠিক জানে না,পরেরদিন জানাবে।
আমি ভেবেছিলাম,মনে হয়  জ্বর  হয়ে বেহুশ,আর না হয় ফেনসিডিল  জাতীয় কিছু খেয়ে পড়ে আছে,তায় সবাই  ভয় পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।

আসলে ব্যাপারটা তা ছিল না।আসল কারন জানলাম পরের দিন।
চুয়াডাঙ্গায় রাসেলের চিকিৎসা সম্ভব নয়।তায় ঢাকা মেডিকেলে নিতে হয়েছে।
পরে আরও খোজ নিয়ে যা জানতে পেরেছিলাম,তা হল...............

রাসেলের লিভারে কোনভাবে রক্ত বা রক্তের জলীয় পদার্থ জমে মারাত্তক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো।জটিলতা এত বেড়েছিলো যে,ওর জীবনের ঝুকিই ছিল বেশি।বেশ কয়েকবার লিভার থেকে পানি বা জলীয় পদার্থ অপসারন করতে হয়েছিল।যা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। লিভারের পাশাপাশি কিডনীতে সমস্যা ধরা পরে।তবে সামান্য পরিমানে।
তবে হ্যা,আরেকটি ব্যপার জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেয়,তা হল,রাসেলের পেটের ভেতর জল জমে ফুলে উঠেছিলো।পেটের অভ্যন্তরের অন্ত্র,অগ্নাশ্যায়,প্লীহা এবং লিভারের আশেপাশে কিছু খালি জায়গা থাকে,যেখানে রক্ত রসের জলীয় অংশ জমা হয়ে এ ধরনের জটিলতা তৈরী করে।

সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে রাসেল জীবন পায়।কিন্তু রাসেল হাসপাতালে ১/২মাস অবস্থান করার পরও পুরোপুরি সুস্থ্য হতে পারেনি।শুনাছিলাম পরবর্তীতে ভারতের কোন এক রাজ্যে চিকিৎসা সম্পন্ন করে সুস্থ্য হয়।
তবে এ সুস্থ্যতা একেবারেই আগের মত নয়। মৃত্যুর খুব কাছে থেকে ফিরে আসে রাসেল।
তবে নিজের শরীরের অনেক ক্ষতি করে ফেলেছে ততোক্ষণে।
এতে রাসেলের দেহের এন্টিঅক্সিডেন্টের ভারসাম্য বা রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা প্রায়ই দুই তৃতীয়াংশ শেষ।আর স্বাস্থ্য বলতে পূর্বে যা ছিলো,পরে তাও হারাতে হল।মানে একে বারেই লিকলিকে,আর শারীরিক দুর্বলতাতো আছেই।

অনেক পরে অবশ্য রাসেল বলেছিলো,কেন ওর এত জটিলতা তৈরী হল।
আর তা হচ্ছে,মোটা হবার আশায় দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ঔষধ সেবন।এর সাথে অবশ্য বিভিন্ন নামধারী হারবাল/ইউনানি ঔষধও ছিল।
ভারতের ডাক্তাররা আরও বলেছিলেন,রাসেল হয়তোবা সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হারেতে পারে।
এর মানে এই নয় যে,পুরুষত্ব পুরোপুরি হারিয়েছে বা নস্ট করেছে।

                   তবে যেটা ঘটেছে,তা অনেক ব্যপক।
                    আপসোস !!
                   দোয়া করি,ভাই সুস্থ্য থাক,ভালো থাক।

এরপর কেটে গেছে আরও ১/২ টা বছর।কিন্তু আর কথা বা দেখা হয়নি রাসেলের সাথে।
ফরদপুর মেডিকেল কলেজ হসপিতালে ইন্টার্নশীপ করার সময় এক লোক মারফত জানতে পেরেছেলাম,রাসেল এখন কনোরকম আছে।এই আর কি!!!!!!!
তবে,রাসেলের সম্পর্কে আজও ঐ ই শেষ খবর আমার কাছে।
আর এখন কেটে গেছে আরও ৪/৫ বছর।
এখন আর জানিনা কিছুই,রাসেলের ব্যাপারে।কোন সোশাল সাইটেও পাইনি ওকে।
তাই স্বার্থপরের মত খোজ করাটাও ছেড়েই দিয়েছি।

                         এই বাস্তব গল্পটা আমার জীবনের এক ট্রাজেডী।বছর খানিক আগে আমি আমার স্কুল জীবনের বন্ধুকেও সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়েছি,কিন্তু রাসেলের অসুস্থ্যতার কথা আমার হৃদয়কে যতটা আলোড়িত করেছিলো,তেমনটি করেনি এখনো।

আসল কথা/শেষ কথা/কাজের কথা..............................  

                     স্টেরয়েড একটি জীবন রক্ষাকারী ঔষধ।এটি নিয়িমিত বা দীর্ঘদিন সেবনের প্রয়োজন হয় না। নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার জন্য এর ব্যাবহার করা হয়।শরীর মোটা করা বা রুচি বর্ধক ঔষধ হিসেবে এর ব্যবহার করার পরিনতি খুব খারপ হতে পারে।

বাজারে বিভিন্ন নামে স্টেরয়েড পাওয়া যায়।

                               DEXAMETHASON  শ্রেনীভুক্ত ঔষধ হতে খুব সতর্ক এবং একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যাতিত সেবন নয়।
যেমন_____TAB__oradexon,decason,steron,dexameson,dexan, ইত্যাদি।

                             আর নিয়ন্ত্রনহীন খোলা বাজারে এই স্টেরয়েড ব্যপক ভাবে হাত বদল হয়।যার লাগাম টানার উপায় পাওয়া দায়।
আমাদের দেশে ভারতীয় স্টেরয়েড প্রচুর পাওয়া যায়।যেগুলো দেখতে কাগজের পাতার মত এবং ঔষধের পাতার বর্ণ হয় লাল কিংবা সাদা।
আর এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ীরা বা হাতুড়ে ডাক্তার রা নিজেদের সুনাম বাড়ানোর জন্য,মানুষের রুচি বর্ধক হিসেবে স্টেরয়েড দেয়।যা সম্পূর্ণ বেইমানী ও প্রাতারনার শামিল।
এ ঔষধ প্রানীর বা মানুষের শরীর মোটা করার জন্য বা মানুষের রুচি বর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা একদম অনুচিত।
এই ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই মুখের রুচি বৃদ্ধি পেয়ে খাবার খাওয়ার পরিমান বাড়ে।
খাবার বেশি খেতে পারছি ভেবে,এই স্টেরয়েড নিয়মিত সেবন মারত্নক বিপদ দেকে আনতে পারে।

স্টেরয়েড ঔষধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর দিকঃ
                          # দীর্ঘদিন এটা সেবনে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
                          #শরীরে নানাবিধ রোগ জন্ম নিতে পারে।
                          #দীর্ঘদিন সেবনে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংগ যেমন, হার্ট,লিভার,কিডনী ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
                          #যৌন সক্ষমতা কমে যেতে পারে।
                          #চিরদিনের জন্য বন্ধাত্ব হতে পারে।
                          #দেহের বিভিন্ন অংশে এমনকি গোটা দেহে বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগ হয়।
                          #রক্তে দূষিত পদার্থ বেড়ে যায়।
                          #শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য নস্ট হয়।

ভাই/বোন,মোটা তাজা হওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার।
খেয়াল করে দেখবেন,রাস্তা ঘাটে কত পাগল পড়ে আছে,খাবার পায় না,সে কি সুন্দর নাদুসনুদুস।
আর আপনি এত পুস্টিকর খাবার খেয়েও চিকন,পাতলা।

হ্যাঁ ভাই/বোন,পুস্টিকর খাবারই খেতে হবে এবং তা প্রয়োজন অনুযায়ী।
বাজে অভ্যাস,যেমন_ধুমপান,বিভিন্ন প্রকার মাদক গ্রহন,অধিক রাত্র জাগা,সময়মত খাবার গ্রহন না করা, এইসব বাজে অভ্যাস ছেড়ে ভালো অভ্যাস করুন।
বেশি বেশি পুস্টকর খাবার গ্রহন,আর নিয়মতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থ্যাই আপনার বা আমার সুসাস্থ্যের চাবি।

এখন,এত কিছুর পরও যদি আপনার অবস্থার উন্নতি না হয়,তবে কোন ভালো স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ শুনুন আর সেই তালিকা অনুযায়ী জীবিন সাজান।আর অপেক্ষা করুন।

আর একদমই কোন ভাবেই না হলে,হাল ছেড়ে দিন।আর বুঝে নিবেন এটা আপনার জন্য সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকেই নেই।
তবে একদমই হতাশ হবেন না। কেননা সৃষ্টিকর্তা তাকে ততটাই দেন,যার যতটা প্রয়োজন।

সুতরং কারো কুপরামর্শে নিজের ক্ষতি ডেকে আনবেন না।
তাছাড়া গ্রামের কিছু হাতুড়ে ডাক্তার বা ঔষধ ব্যবসায়ী রুচি বর্ধক ঔষধ বলে স্টরয়েড ঔষধ চালিয়ে দেয়।এ ব্যপারে খুব সাবধান।

৪টি মন্তব্য:

  1. আমি প্রায় অনেক বছর ওরাডেক্সন খেয়েছি ২ টা করে প্রতিদিন বাদ এখন লাষ্ট ৪ মাস যাবত বাদ দিয়েছি। আমি খেয়েছি প্রায় ৪ বছর মাঝে মাঝে বাদ পরতো বাট আমি কিন্তু খুব মোটা হইনি যা আছি তাই ই যাষ্ট হাল্কা ৫।৬ কেজি বেশি। এখন বাদ দিয়ে দিয়েছি আমার কি প্রব্লেম হতে পাতে?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আমি খুবই দু:খিত।ব্যক্তিগত এবং প্রোফেশনাল কাজে খুবই ব্যস্ত থাকায় ব্লগে নিয়মিত আসতে পারিনি।ক্ষমা চাচ্ছি।।
      ভাই,এটা একটু জীবন রক্ষাকারী ঔষধ।যা খুবই সামান্য পরিমানে ব্যবহার করা হয়।কিন্তু নিজেকে মোটা করার জন্য নয়।আশাকরি এড়িয়ে চলবেন।আমি এর ক্ষতিকর দিক আলোচনা করেছি।ধন্যবাদ।

      মুছুন